[১] সৈয়দ মীর আলী আহম্মেদ :
বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদী গ্রামের মীর আলী আহম্মেদ জন্ম গ্রহন করেন। তিনি পদমদী সৈয়দ বংশের প্রথম সরকারী চাকুরীজীবি। তিনি ২২ থানার দারোগা ছিল।
[২] সৈয়দ মীর আলী আশরাফ খান বাহাদুর :
সৈয়দ মীর আলী আশরাফ খান বাহাদুর বালিয়াকান্দি থানার পদমদী গ্রামে সম্ভান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। ঢাকার মানওয়ার চর ক্রয় করে জমিদারী লাভ করেন। কোম্পানী বাহাদুর হতে তিনি খান বাহাদুর খেতাব অর্জন করেন। মীর আলী আশরাফ খান বাহাদুর তার জমিদরী ১৫৭ নং কালেক্টরী তৌজির ১৪ আনা অংশ জন কল্যানে ওয়াকফ করে দেন।
[৩] নবাব সৈয়দ মীর মোহম্মদ আলী :
সৈয়দ মীর মোহম্মদ আলী বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৮৩০ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ডাকসাইটে নবাব ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়াতে ১৮৩৫ সালে নওয়াব হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই বাংলাদেশের প্রথম এবং উপমহাদেশের দ্বিতীয় হাই স্কুল। ১৮৪০ সালে তিনি নিজ গ্রাম পদমদীতে একটি ইংলিশ বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার প্রথম স্কুল। বিষাদ সিন্ধু খ্যাত মীর মশাররফ হোসেন উক্ত স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৮৭৭ সালে গঠিত ন্যাশনাল মহামেডান এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।
[৪] মীর মশাররফ হোসেন :
মীর মশাররফ হোসেন ১৯৪৭ সালে ১৩ নভেম্বর কুষ্ঠিয়ার লাহিরী পাড়ায় (নানা বাড়ী) জন্ম গ্রহন করেন। মীর মশাররফ হোসেনের দাদা মীর ইব্রাহীমের পৈত্রিক নিবাস রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে। তিনি ছিলেন নবাব পরিবারের সন্তান। একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রবদ্ধিক। স্কুল জীবন কাটে প্রথমে কুষ্টিয়ায় পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগরে। জগমোহন নদীর পাঠশালা, কুমারখালীর ইংরেজী বিদ্যালয়, পদমদীর নবাব স্কুল ও কৃষ্ণনগরে কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যয়ন করেন। জীবনের অধিকাংশ ব্যয় হয় পদমদীর নবাব ষ্টেটে চাকুরী করে। এর মধ্যে ১৮৮৫ তে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার এষ্টেটের ম্যানেজার হয়ে দেলদুয়ারে আগমন করেন। জমদিার পরিবারের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় এবং স্থানীয় কর্মচারীদের সংগে বিবাদের কারনে টাঙ্গাইল ছেড়ে লাহিরী পাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। এর পর ভাগ্যান্বেষণে বগুরা, কলিকাতা এবং সর্বশেষ পদমদীতে যাতায়াত। ১৯০৩ থেকে ১৯০৯ পর্যন্ত কলিকাতায় অবস্থান করেন। এ সময় কলকাতার সংবাদ প্রভাকর ও কুমারখালীর গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার মফস্বল সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো জমিদার দর্পন, বিষাদ সিন্ধু ইত্যাদি। শেষ জীবন তিনি পদমদীতে কাটান। ১৯১১ সালে তার মৃত্যুর পর পদমদীতেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
[৫] সাহ্ সাদুল্লা :
সাহ সাদুল্লা মীর মশাররফ হোসেনের পূর্ব পুরুষ। মীরের বর্ণনায় ‘জগৎ বিখ্যাত বোগদাদ নগর হতে তাপস প্রবন সাহ সাদুল্লা ভ্রমন করতে করতে ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ ভ্রমন করতে করতে বঙ্গদেশ, বঙ্গদেশ ভ্রমন করতে করতে অধুনায়তন ফরিদপুরের অন্তর্গত সেকাড়া গ্রামে উপস্থিত হন। তার সময়কাল ১৫০০ শতকের মাঝামাঝি। তিনি লিখেছেন সৈয়দ সাদুল্লাহ একা আসেন নাই। তার সাথে বিস্তর লোক ছিল। তার বর্ণনায় শুধু শিষ্য সেবকের কথাই নাই, রজক, নরসুন্দর পর্যন্ত ছিল। সাদুল্লাহর পূর্ববঙ্গে আসার দুটি কারন ছিল - এক সাদুল্লাহ ইচ্ছা ধর্ম প্রচার, দুই তার পিতার সন্ধান করা। সাদুল্লাহর পিতা ছিলেন সাহ পাহলেয়ানের গুরু। সেকাড়াতে সাহ পাছলেয়ানের অবস্থানের কথা জানতে পেরে তার পিতার খোজ করা যাবে এবং ইসলামের প্রচারও সম্ভব হবে এসব উদ্দেশ্য নিযে তিনি সেকাড়ায় আগমন করেন। সাহ সাদুল্লা আর ফিরে নাই। সাহ পাহলেয়ানের মেয়ের সাথে তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এবং সেকাড়াতেই থেকে যান। সাদুল্লারই বংশীয় মীর মশাররফ হোসেন এবং এ কাহিনী তার রচিত , আমি কে? নিবদ্ধে উল্লেখ আছে, সাহ সাদুল্লা ও তাদের শিষ্যবর্গের প্রভাবে এ অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটে।
[৬] প্রফেসর ডঃ ফকীর আব্দুর রশীদ :
রাজবাড়ী জেলার সাহিত্যে কর্মে ডঃ ফকীর আব্দুর রশীদ বিশেষ ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৮ সালে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত দেশের সাহিত্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা তিনি তার সাহিত্য কর্ম দ্বারা স্থান করে নিয়েছেন। তার সাহিত্য কর্ম বিভিন্ন মূখী। তিনি ষাটের দশকের প্রথমে রাজবাড়ী থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘চন্দনা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ডঃ ফকীর আব্দুর রশীদ এর জন্ম স্থান দক্ষিণবাড়ী গ্রামে। তিনি একাধারে শিক্ষক, সাহিত্যিক, কবি, গবেষক। তার রচিত ‘সুফী দর্শন’ দেশে বিশেষ ভাবে সমাদৃত। তার গ্রন্থের সংখ্যা দশেরও অধিক। তিনি সুফী দর্শনের উপর গবেষণার জন্য পি এইচ ডি ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। তিনি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ডঃ ফকীর আব্দুর রশীদ বর্তমানে বাংলা একাডেমী কর্তৃক বিভিন্ন জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইহিহাস রচনা প্রকল্পের রাজবাড়ী জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব প্রাপ্ত লেখক।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস